জলাতঙ্ক যা হাইড্রোফোবিয়া নামেও পরিচিত। ভাইরাল জনিত মারাত্মক এই সংক্রমণটি সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্যপ্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। রোগটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য আবার এর সংক্রমণে মৃত্যুও শতভাগ অনিবার্য।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়। বাংলাদেশেও বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয় দেশে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের শিকার হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসা নেওয়া হলে এটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হয়ে ভাইরাস যদি শরীরে ছড়িয়ে যায় তাহলে আর সেই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
এ অবস্থায় পৃথিবীর ১২টি দেশের সঙ্গে মিল রেখে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক: মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয়’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনেটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪ জন। কুকুর, বিড়াল কিংবা শিয়ালের কামড়ের কারণে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৯ জন টিকা নিয়েছেন।
এর আগে ২০২০ সালে এতে মারা যান ২৬ জন, টিকা নিয়েছিলেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪ জন। ২০২১ সালে জলাতঙ্কে মারা গেছেন ৪০ জন, টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৩ জন। এর আগে জলাতঙ্কের কারণে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৫৭ জন করে মারা যান। ২০১৮ সালে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯ জন এবং ২০১৯ সালে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬১ জন টিকা নিয়েছিলেন।
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্যমতে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হাসপাতালে জলাতঙ্কে মারা গেছেন ৩১ জন। তাদের মাঝে ১০ জন শিশু ও ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক। আক্রমণের শিকার হয়ে টিকা নিয়েছে ৬২ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫৬৭ জন কুকুরের ও ২৪ হাজার ৯৩৩ জন অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের শিকার হয়ে টিকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে তিনটি লক্ষণ দেখা দেয়। তার মধ্যে আছে পানিভীতি, আলোভীতি ও বায়ুভীতি। এই ধরনের লক্ষণ যখন প্রকাশ পায় তখন রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব উপসর্গ নিয়ে বেশিরভাগ রোগীই ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান।